বরিশাল হবে বাংলার ব্যাংকক!!!
সারাদেশে উন্নয়নের পথযাত্রায় বরিশাল হতে চলেছে বাংলাদেশের সিঙ্গাপুর! চলমান বিভিন্ন প্রকল্পে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরের মতো বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ মাথাপিছু আয়ের শহর হতে পারে বরিশাল। এমন আশাবাদ উন্নয়ন-সংশ্লিষ্টদের। সিঙ্গাপুরের মতো এমনিতেই আলাদা নির্ভরতা রয়েছে বরিশালের।একটা সময় ছিল যখন বরিশালকে বাঁকাচোখে দেখা হতো। অবজ্ঞা করা হতো ‘বরিশাইলল্যা’ বলে। কারণ তখন বরিশালের উন্নয়ন ও সম্ভাবনা ছিল অবহেলিত। সবদিক থেকে পিছিয়ে ছিল গোটা অঞ্চল। কিন্তু বেশ দ্রুতই বদলে যাচ্ছে সবকিছু। সহসাই যেন উদ্ভাসিত হতে চলেছে অপার সম্ভাবনার দুয়ার। কারণ বরিশালের সমুদ্রবন্দর আর পর্যটন শিল্পকে ঘিরে এমনসব কর্মযজ্ঞ চলছে— যা কখনো কেউ দেখেনি।
১০হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে রেললাইন আসছে বরিশালে
ওয়াকিবহালদের মতে, নদী-খালের দেশ বরিশালে এক সময় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল খুবই অনুন্নত। সড়ক পথে ফেরি পারাপার ছিল এক বিড়ম্বনার নাম। নৌপথে যাতায়াতেরও আধুনিক ব্যবস্থা ছিল না। আকাশপথেও বিচ্ছিন্ন ছিল বরিশাল। রেল ছিল এ অঞ্চলের মানুষের কল্পনা। ছিল না শিল্প কলকারখানা-গার্মেন্ট, জাহাজ নির্মাণ শিল্প।
বরিশালের জিসানের প্রাইভেট কার ১ লিটারে চলবে ১৪৫ কিলোমিটার!
ওয়াকিবহাল সূত্রগুলো জানিয়েছে, আগে কুয়াকাটায় পর্যটকদের তেমন কোনো সুবিধাই ছিল না। কুয়াকাটা সৈতক ঘিরে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও পথে পথে ফেরি বিড়ম্বনা তাদের বিমুখ করত। ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটায় যেতে মাওয়া-কাওড়াকান্দি পয়েন্টে পদ্মা নদী, কলাপাড়ার আন্দারমানিক নদী, লেবুখালীর পায়রা নদী, হাজীপুরের সোনাতলা নদী এবং মহিপুরের শিববাড়িয়া নদী পয়েন্টে ফেরির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হতো পর্যটকদের।
বরিশাল-পায়রা রেলপথ ব্রিটিশ কোম্পানিকে দিয়ে নির্মাণের নির্দেশ
এই বাস্তবতায় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করেন ১৯৯৬ সালে তৎকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি কুয়াকাটাকে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণা করেন। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় দফায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বরিশাল তথা দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে ঘিরে প্রণয়ন করে উন্নয়নের নানা পরিকল্পনা। আওয়ামী লীগের গত আমলে কলাপাড়া, হাজীপুর এবং মহিপুর পয়েন্টে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত মেয়াদের শেষ দিকে কলাপাড়া সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বরিশালকে নিয়ে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী
চলতি বছর কলাপাড়া, হাজীপুর এবং মহিপুর পয়েন্টের সেতু সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। শুরু হয়েছে লেবুখালীর পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কাজ। এইসঙ্গে দেশের সবচেয়ে মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। বরিশাল-ঢাকা রুটে চলাচল করছে বিলাসবহুল অত্যাধুনিক নৌযান। দীর্ঘ কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর সরকারের বর্তমান মেয়াদে বরিশাল-ঢাকা আকাশ পথে রাষ্টীয় পতাকাবাহী বিমান ছাড়াও চলাচল করছে বেসরকারি ইউএস বাংলা এবং নভো এয়ারের বিমান। শুধু তাই নয়, দ্রুত কুয়াকাটা এবং পায়রা বন্দরকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের মধ্যে আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারের এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বরিশাল শুধু এগিয়েই যাবে না, চলে যাবে সামনের কাতারে। পর্যটনে কুয়াকাটা তথা বরিশাল হবে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।শুধু পর্যটনই নয়, বাংলাদেশের তৃতীয় বাণিজ্যিক সমুদ্র বন্দর হিসেবে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে পায়রা; পদ্মা সেতু নির্মাণের পর এই সমুদ্র বন্দরটি দক্ষিণ জনপদের অর্থনীতির চিত্র বদলে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।
শুধু তাই নয় মাদার ভেসেল নোঙ্গরের সুবিধাসহ চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের চেয়েও আধুনিক মানের হিসেবে গড়ে তুলতে পায়রা সমুদ্র বন্দরের বিভিন্ন অংশের বাকি নির্মাণের কাজ চলছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের রাবনাবাদ চ্যানেলের সম্মুখে। বন্দরে কনটেইনার টার্মিনাল, এলএনজি টার্মিনাল, বাল্কহেড টার্মিনাল, শিপইয়ার্ড, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণসহ চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ।
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বিভিন্ন সভা-সমাবেশ-সেমিনারে বলে থাকেন, পদ্মা সেতু আর পায়রা বন্দর চালু হলে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চল হবে সিঙ্গাপুরের চেয়েও সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক অঞ্চল।
একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত আর সূর্যোদয় দেখার বিরল সুযোগ রয়েছে জাপানে। ঠিক একই সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের এই সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায়। কুয়াকাটা ইনভেস্টর ফোরামের মুখপাত্র হাসনুল ইকবাল এ প্রসঙ্গে বলেন, কুয়াকাটা যাওয়ার পথে এখন তিনটি ফেরি পয়েন্টে যে সেতু চালু হয়েছে, সেটা ঢাকাসহ দেশ-বিদেশের পর্যটকরা এখনো ভালোভাবে জানেন না। কুয়াকাটায় এখন থাকা-খাওয়ার সমস্যা নেই। এখানে ভালোমানের অনেক হোটেল-মোটেল-রেস্টুরেন্ট হয়েছে।
শুধু স্থানীয় মানুষের এবং সেখানে দায়িত্বরত ট্যুরিস্ট ও নৌ পুলিশের মানসিকতার পরিবর্তন হলে কুয়াকাটায় স্বাচ্ছন্দ্যে বেড়াতে পারবেন পর্যটকরা। তিনি বলেন, বেড়ানো ছাড়াও এখন কুয়াকাটায় বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যার অন্যতম শাপলাপাতা মাছ প্রক্রিয়াজাত (শুঁটকি) করে এবং মৌসুমি ফল তরমুজ বিদেশে রপ্তানি করা হয়।
বরিশাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি এফবিসিসিআই’র পরিচালক আলহাজ সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, চট্টগ্রাম এবং মংলা সমুদ্রবন্দরে মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাস করতে হয় বহির্নোঙ্গরে। রাবনাবাদ চ্যানেল অনেক গভীর হওয়ায় পায়রা সমুদ্রবন্দরে সরাসরি পণ্য খালাস করতে পারবে মাদার ভেসেলগুলো। এতে পণ্য আমাদানি-রপ্তানিতে পরিবহন খরচ অনেক কমবে। বরিশালে শিল্প কলকারখানা-গার্মেন্ট হলে কম খরচে শ্রমিক পাওয়া যাবে। উত্পাদন ব্যয়ও কমবে। সব কিছু মিলিয়ে আগামী কয়েক বছরে দক্ষিণাঞ্চল সিঙ্গাপুরের চেয়েও সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে বলে তার বিশ্বাস।
পায়রা সমুদ্র্রবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, যখন একটি বন্দর গড়ে ওঠে, তখন সেই বন্দর ঘিরে অনেক কলকারকানা-গার্মেন্ট স্থাপন, আমদানি-রপ্তানিসহ ব্যাপক কর্মযজ্ঞ হবে এটাই স্বাভাবিক। ফলে এই বন্দর বরিশালের চেহারা পাল্টে দেবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্দরের অদূরে লালুয়া ইউনিয়নে ১ হাজার একর আয়তন এলাকা ঘিরে চলছে কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ। বিদ্যুেকন্দ্রের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে মূল বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণের কাজ। এখানেও কাজ করার সুযোগ পাবে চার শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা। বিদ্যুৎ প্রকল্প ঘিরে আন্দারমানিক নদী তীরে চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ।
এ ছাড়া উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারের গত মেয়াদে বরিশালে শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। এখানে আছে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, আলাদা মহিলা ও পুরুষ টেকনিক্যাল ট্রেনিং কলেজ (টিটিসি)। আছে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। যদিও মেডিকেল কলেজকে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার দাবি এখন সার্বজনীন। চালুর অপেক্ষায় আছে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং মেরিন একাডেমি। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও। সব কিছু মিলিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য বরিশালেই রয়েছে সব ধরনের ব্যবস্থা। আবার অন্যদিকে বরিশালের পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় চলছে দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল নেটওয়ার্কের কাজ।
এছাড়া বরিশালে গড়ে উঠছে আইসিটি পার্ক (হাইটেক পার্ক), বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার ও অর্থনৈতিক অঞ্চল। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে ব্যাপক পরির্বতন আসবে বরিশালে।
বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর এম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকেই শিক্ষায় অগ্রগামী ছিল বরিশাল। এখনো শিক্ষায় সারা দেশের চেয়ে সূচকে এগিয়ে বরিশাল। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বরিশালে যুগোপযোগী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়েছে। এখন দরকার সেগুলোর সঠিক পরিচর্যা।
ইইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।
সারাদেশে উন্নয়নের পথযাত্রায় বরিশাল হতে চলেছে বাংলাদেশের সিঙ্গাপুর! চলমান বিভিন্ন প্রকল্পে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরের মতো বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ মাথাপিছু আয়ের শহর হতে পারে বরিশাল। এমন আশাবাদ উন্নয়ন-সংশ্লিষ্টদের। সিঙ্গাপুরের মতো এমনিতেই আলাদা নির্ভরতা রয়েছে বরিশালের।একটা সময় ছিল যখন বরিশালকে বাঁকাচোখে দেখা হতো। অবজ্ঞা করা হতো ‘বরিশাইলল্যা’ বলে। কারণ তখন বরিশালের উন্নয়ন ও সম্ভাবনা ছিল অবহেলিত। সবদিক থেকে পিছিয়ে ছিল গোটা অঞ্চল। কিন্তু বেশ দ্রুতই বদলে যাচ্ছে সবকিছু। সহসাই যেন উদ্ভাসিত হতে চলেছে অপার সম্ভাবনার দুয়ার। কারণ বরিশালের সমুদ্রবন্দর আর পর্যটন শিল্পকে ঘিরে এমনসব কর্মযজ্ঞ চলছে— যা কখনো কেউ দেখেনি।
১০হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে রেললাইন আসছে বরিশালে
ওয়াকিবহালদের মতে, নদী-খালের দেশ বরিশালে এক সময় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল খুবই অনুন্নত। সড়ক পথে ফেরি পারাপার ছিল এক বিড়ম্বনার নাম। নৌপথে যাতায়াতেরও আধুনিক ব্যবস্থা ছিল না। আকাশপথেও বিচ্ছিন্ন ছিল বরিশাল। রেল ছিল এ অঞ্চলের মানুষের কল্পনা। ছিল না শিল্প কলকারখানা-গার্মেন্ট, জাহাজ নির্মাণ শিল্প।
বরিশালের জিসানের প্রাইভেট কার ১ লিটারে চলবে ১৪৫ কিলোমিটার!
ওয়াকিবহাল সূত্রগুলো জানিয়েছে, আগে কুয়াকাটায় পর্যটকদের তেমন কোনো সুবিধাই ছিল না। কুয়াকাটা সৈতক ঘিরে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও পথে পথে ফেরি বিড়ম্বনা তাদের বিমুখ করত। ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটায় যেতে মাওয়া-কাওড়াকান্দি পয়েন্টে পদ্মা নদী, কলাপাড়ার আন্দারমানিক নদী, লেবুখালীর পায়রা নদী, হাজীপুরের সোনাতলা নদী এবং মহিপুরের শিববাড়িয়া নদী পয়েন্টে ফেরির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হতো পর্যটকদের।
বরিশাল-পায়রা রেলপথ ব্রিটিশ কোম্পানিকে দিয়ে নির্মাণের নির্দেশ
এই বাস্তবতায় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করেন ১৯৯৬ সালে তৎকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি কুয়াকাটাকে পর্যটন কেন্দ্র ঘোষণা করেন। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় দফায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বরিশাল তথা দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে ঘিরে প্রণয়ন করে উন্নয়নের নানা পরিকল্পনা। আওয়ামী লীগের গত আমলে কলাপাড়া, হাজীপুর এবং মহিপুর পয়েন্টে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত মেয়াদের শেষ দিকে কলাপাড়া সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বরিশালকে নিয়ে উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী
চলতি বছর কলাপাড়া, হাজীপুর এবং মহিপুর পয়েন্টের সেতু সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। শুরু হয়েছে লেবুখালীর পায়রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের কাজ। এইসঙ্গে দেশের সবচেয়ে মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। বরিশাল-ঢাকা রুটে চলাচল করছে বিলাসবহুল অত্যাধুনিক নৌযান। দীর্ঘ কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর সরকারের বর্তমান মেয়াদে বরিশাল-ঢাকা আকাশ পথে রাষ্টীয় পতাকাবাহী বিমান ছাড়াও চলাচল করছে বেসরকারি ইউএস বাংলা এবং নভো এয়ারের বিমান। শুধু তাই নয়, দ্রুত কুয়াকাটা এবং পায়রা বন্দরকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের মধ্যে আনার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সরকারের এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বরিশাল শুধু এগিয়েই যাবে না, চলে যাবে সামনের কাতারে। পর্যটনে কুয়াকাটা তথা বরিশাল হবে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।শুধু পর্যটনই নয়, বাংলাদেশের তৃতীয় বাণিজ্যিক সমুদ্র বন্দর হিসেবে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করেছে পায়রা; পদ্মা সেতু নির্মাণের পর এই সমুদ্র বন্দরটি দক্ষিণ জনপদের অর্থনীতির চিত্র বদলে দেবে বলে মনে করা হচ্ছে।
শুধু তাই নয় মাদার ভেসেল নোঙ্গরের সুবিধাসহ চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের চেয়েও আধুনিক মানের হিসেবে গড়ে তুলতে পায়রা সমুদ্র বন্দরের বিভিন্ন অংশের বাকি নির্মাণের কাজ চলছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের রাবনাবাদ চ্যানেলের সম্মুখে। বন্দরে কনটেইনার টার্মিনাল, এলএনজি টার্মিনাল, বাল্কহেড টার্মিনাল, শিপইয়ার্ড, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণসহ চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ।
শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বিভিন্ন সভা-সমাবেশ-সেমিনারে বলে থাকেন, পদ্মা সেতু আর পায়রা বন্দর চালু হলে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চল হবে সিঙ্গাপুরের চেয়েও সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক অঞ্চল।
একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত আর সূর্যোদয় দেখার বিরল সুযোগ রয়েছে জাপানে। ঠিক একই সুযোগ রয়েছে বাংলাদেশের এই সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায়। কুয়াকাটা ইনভেস্টর ফোরামের মুখপাত্র হাসনুল ইকবাল এ প্রসঙ্গে বলেন, কুয়াকাটা যাওয়ার পথে এখন তিনটি ফেরি পয়েন্টে যে সেতু চালু হয়েছে, সেটা ঢাকাসহ দেশ-বিদেশের পর্যটকরা এখনো ভালোভাবে জানেন না। কুয়াকাটায় এখন থাকা-খাওয়ার সমস্যা নেই। এখানে ভালোমানের অনেক হোটেল-মোটেল-রেস্টুরেন্ট হয়েছে।
শুধু স্থানীয় মানুষের এবং সেখানে দায়িত্বরত ট্যুরিস্ট ও নৌ পুলিশের মানসিকতার পরিবর্তন হলে কুয়াকাটায় স্বাচ্ছন্দ্যে বেড়াতে পারবেন পর্যটকরা। তিনি বলেন, বেড়ানো ছাড়াও এখন কুয়াকাটায় বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যার অন্যতম শাপলাপাতা মাছ প্রক্রিয়াজাত (শুঁটকি) করে এবং মৌসুমি ফল তরমুজ বিদেশে রপ্তানি করা হয়।
বরিশাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি এফবিসিসিআই’র পরিচালক আলহাজ সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, চট্টগ্রাম এবং মংলা সমুদ্রবন্দরে মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাস করতে হয় বহির্নোঙ্গরে। রাবনাবাদ চ্যানেল অনেক গভীর হওয়ায় পায়রা সমুদ্রবন্দরে সরাসরি পণ্য খালাস করতে পারবে মাদার ভেসেলগুলো। এতে পণ্য আমাদানি-রপ্তানিতে পরিবহন খরচ অনেক কমবে। বরিশালে শিল্প কলকারখানা-গার্মেন্ট হলে কম খরচে শ্রমিক পাওয়া যাবে। উত্পাদন ব্যয়ও কমবে। সব কিছু মিলিয়ে আগামী কয়েক বছরে দক্ষিণাঞ্চল সিঙ্গাপুরের চেয়েও সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে বলে তার বিশ্বাস।
পায়রা সমুদ্র্রবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান বলেন, যখন একটি বন্দর গড়ে ওঠে, তখন সেই বন্দর ঘিরে অনেক কলকারকানা-গার্মেন্ট স্থাপন, আমদানি-রপ্তানিসহ ব্যাপক কর্মযজ্ঞ হবে এটাই স্বাভাবিক। ফলে এই বন্দর বরিশালের চেহারা পাল্টে দেবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্দরের অদূরে লালুয়া ইউনিয়নে ১ হাজার একর আয়তন এলাকা ঘিরে চলছে কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ। বিদ্যুেকন্দ্রের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে মূল বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণের কাজ। এখানেও কাজ করার সুযোগ পাবে চার শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা। বিদ্যুৎ প্রকল্প ঘিরে আন্দারমানিক নদী তীরে চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ।
এ ছাড়া উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারের গত মেয়াদে বরিশালে শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। এখানে আছে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, আলাদা মহিলা ও পুরুষ টেকনিক্যাল ট্রেনিং কলেজ (টিটিসি)। আছে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। যদিও মেডিকেল কলেজকে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করার দাবি এখন সার্বজনীন। চালুর অপেক্ষায় আছে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এবং মেরিন একাডেমি। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও। সব কিছু মিলিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য বরিশালেই রয়েছে সব ধরনের ব্যবস্থা। আবার অন্যদিকে বরিশালের পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় চলছে দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল নেটওয়ার্কের কাজ।
এছাড়া বরিশালে গড়ে উঠছে আইসিটি পার্ক (হাইটেক পার্ক), বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার ও অর্থনৈতিক অঞ্চল। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে ব্যাপক পরির্বতন আসবে বরিশালে।
বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর এম মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকেই শিক্ষায় অগ্রগামী ছিল বরিশাল। এখনো শিক্ষায় সারা দেশের চেয়ে সূচকে এগিয়ে বরিশাল। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে বরিশালে যুগোপযোগী বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়েছে। এখন দরকার সেগুলোর সঠিক পরিচর্যা।
ইইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।