অনেক, অনেকদিন আগের কথা। তখনো পৃথিবীতে এতো লোকের আনাগোনা শুরু হয় নি। কিছু কষ্টসহিষ্ণু মানুষ তখন সাইবেরিয়া, আলাস্কা, কানাডা, গ্রীনল্যান্ড এবং স্কান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর উত্তরে বসবাস করতো। তারা নিজেদেরকে ‘ইনুইট’ বলে ডাকতো, যার অর্থ ‘মানুষ’। সেই ‘মানুষ’দের ভিতর এক খুব সুন্দরী, রুপসী মেয়ে থাকতো, যাকে সবাই সেডনা বলে সম্নোধন করতো।
সেডনা থাকতো আসলে বাফিন দ্বীপে। এক সময় সেডনার বিয়ের বয়স হলো, কিন্তু সে কাউকেই বিয়ে করতে রাজী হলো না। সেডনার বাবা খুব বড়ো শিকারি ছিলো, তাই তারা সব সময় খুব আরাম-আয়েশে থাকতো। সেডনা আসলে সেই আরাম-আয়েশ ছেড়ে থাকতে চাইলো না, তাই বাবার চাপ থাকা সত্ত্বেও সে বিয়েই করলো না। সেডনার বাবা খুব ক্ষেপে গেলো, সেডনাকে বললো, “এলাকায় শিকার অনেক কমে গেছে। এভাবে চললে আর কিছুদিন পর না খেয়ে থাকতে হবে। তোমার এখন একজন শিকারিকে বিয়ে করা উচিত,যে তোমার দেখাশোনা করবে।” সেডনা রেগে গিয়ে বললো, “প্রয়োজনে এক কুকুর বিয়ে করবো, তবুও কোনো শিকারি বিয়ে করবো না।” বাবা তাই করলো, জোর করে সে তার অবাধ্য মেয়েকে এক কুকুরের সাথে বিয়ে দিয়ে একটি আলাদা ছোট দ্বীপে নির্বাসন দিলো।
কুকুর-স্বামী প্রতিদিন খাবার নিয়ে সে দ্বীপে যেতো, সেডনাকে খেতে দিতো, আবার চলে আসতো। এভাবে অনেকদিন হয়ে গেলো। সেডনার কিছু সন্তান হলো কুকুর জাতীয়, কিছু সন্তান হলো মানুষ জাতীয়। এক সময় সেডনার মনে এই জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা শুরু হলো, বাবাও তার ভুল বুঝতে পারলো। কোনো একদিন বাবা সেডনার কুকুর-স্বামীকে হত্যা করে সেডনাকে গ্রামে নিয়ে আসে।
বেশ কিছুদিন পর, এক কায়াকে করে খুব অভিজাত পোশাকে (খুব বেশী ফার যুক্ত) এক যুবক সে গ্রামে এসে ভিড়লো। যুবকটি এসে সেডনার বাবার কাছে সেডনাকে বিয়ে করার অনুমতি চাইলো। সেডনারও খুব পছন্দ হলো। যুবকটিকে সলাজ কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, “আপনাদের দ্বীপে কী কোনো সুন্দরী অবিবাহিত মেয়ে নেই?” “আছে, কিন্তু আমি তোমাকে বিয়ে করার জন্যই এতটা পথ পাড়ি দিয়েছি। আমি তোমাকে খুব সুখে রাখবো, সব ধরনের খাবার তুমি পাবে, খুব সুন্দর একটা বাড়িও পাবে।” বিয়েটা হতে আর খুব বেশী সময় লাগে নি। যুবকটি বিয়ে শেষে সেডনাকে নিয়ে ওদের দ্বীপের দিকে যাত্রা শুরু করলো।
অনেক, অনেক দূরে সেডনা যখন যুবকদের দ্বীপে এলো, কাউকে দেখতে পেলো না। দেখতে পেলো না কোনো বাড়িও। দ্বীপের একপ্রান্তে এক বিশাল পাখির বাসা দেখিয়ে যুবকটি বললো, “ওই যে, আমার বাড়ি!” সেডনার বিস্মিত চোখের সামনে যুবকটি তার আসল পরিচয় দিলো। সে র্যা ভেন গোষ্ঠীভুক্ত এক বিশাল পাখি, সেডনাকে বিয়ে করার জন্য সমস্ত শক্তি দিয়ে কিছু সময়ের জন্য মানুষে রুপান্তরিত হয়েছিলো। সেডনা যেনো হতাশ হয়ে পড়লো। তার স্বপ্ন যেনো ভেঙ্গে চৌচির হয়ে গেলো। সে অবিরত কাঁদতে শুরু করলো।
সেডনার কান্নার শব্দ বাতাসে ভেসে সেডনার বাবার কাছে পৌঁছালো। মেয়ের কষ্টে সেও খুব কষ্ট পেলো। মেয়েকে খুঁজতে খুঁজতে পাখি-স্বামীর দ্বীপে এলো সেডনার বাবা। বাবা যখন দ্বীপে এলো, তখন পাখি-স্বামী আর্কটিকে মাছ শিকারে বের হয়েছিলো। এই সুযোগে বাবা, সেডনাকে নিয়ে কায়াকে (এক ধরনের নৌকা) করে সেডনাদের দ্বীপের দিকে রওয়ানা দিলো।
দূর থেকে পাখি-স্বামী কায়াকে করে সেডনার চলে যাওয়া দেখতে পেয়েই বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে ধাওয়া শুরু করলো। এইসব বিশালকায় পাখিগুলোর ডানার ঝাপটায় সাগরে প্রচণ্ড ঝড়ের সৃষ্টি হয়। এমন ঝড়ের সৃষ্টি হয় যে, কায়াকে বাবা আর সেডনার একসাথে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
পাখির ডানার ঝাপটায় সাগরে এক ঝড়ের সৃষ্টি হয়
সেডনার বাবা নিজেকে বাঁচানোর জন্য সেডনাকে সাগরে ছুড়ে ফেলে দেয়। কিন্তু সেডনা এতো সহজে এই পৃথিবী থেকে চলে যাবার জন্য প্রস্তুত ছিলো না। সেই হিম শীতল সাগরে সাতরে সে কায়াকের কিনারা ধরে ঝুলে রইলো। কায়াক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললে, বাবা সেডনার একটা আঙ্গুল কেটে ফেলে। কাটা আঙ্গুলটি সাগরে পড়া মাত্রই সেখান থেকে একটি সীল মাছের সৃষ্টি হলো। বাবা আরেকটি আঙ্গুল কাটলো, সেখান থেকে তিমি, আরেকটি আঙ্গুল থেকে ওয়ালরুস, এবং আরেকটি আঙ্গুল থেকে মাছের সৃষ্টি হলো। এক সময় সেডনা সেই হিম শীতল সাগরের তলদেশে তলিয়ে গেলো। কিন্তু মারা গেলো না, পরিনত হলো সাগরে দেবীতে, যে দেবী তার শরীরের অঙ্গ থেকে সৃষ্ট সাগরের প্রাণীগুলোর অভিভাবক হিসেবে আজও বেঁচে আছে ইনুইটদের মননে।
আর্কটিক অঞ্চলের শিকারিরা তাদের শিকারের জন্য সেডনা দেবীর উপর খুবই নির্ভরশীল। যখন সাগরে কোনো শিকার পাওয়া যায় না, ইনুইটরা বুঝতে পারে কোনো কারণে সেডনার বিশাল কালো চুল এলোমেলো হয়ে গেছে। সেডনার যেহেতু কোনো আঙ্গুল নেই, সে চুল আঁচরাতে পারছে না, তাই সেডনা ক্ষেপে আছে এবং কোনো শিকার দিচ্ছে না। সেই সময় ইনুইট শামান (ধর্মীয় পুরুষ) সাগরের তলদেশে সেডনার কাছে যাত্রা শুরু করে, সেডনার চুল চিরুনি দিয়ে সুন্দর করে আঁচড়িয়ে দেয়। সেডনাও খুশি হয়ে শিকারিদের কাছে শিকারদের সহজলভ্য করে দেয়। এভাবেই সেডনা হয়ে গেলো ইনুইটদের প্রধান দেবী, যার উপরের অংশ মানুষের মতো এবং নিচের অংশ মাছের লেজের মতো।কোনো কোনো ইনুইট ভার্সনে আছে, সেডনার সাথে সাগরতলে তার কুকুর-স্বামীও রয়েছে।
সেডনা থাকতো আসলে বাফিন দ্বীপে। এক সময় সেডনার বিয়ের বয়স হলো, কিন্তু সে কাউকেই বিয়ে করতে রাজী হলো না। সেডনার বাবা খুব বড়ো শিকারি ছিলো, তাই তারা সব সময় খুব আরাম-আয়েশে থাকতো। সেডনা আসলে সেই আরাম-আয়েশ ছেড়ে থাকতে চাইলো না, তাই বাবার চাপ থাকা সত্ত্বেও সে বিয়েই করলো না। সেডনার বাবা খুব ক্ষেপে গেলো, সেডনাকে বললো, “এলাকায় শিকার অনেক কমে গেছে। এভাবে চললে আর কিছুদিন পর না খেয়ে থাকতে হবে। তোমার এখন একজন শিকারিকে বিয়ে করা উচিত,যে তোমার দেখাশোনা করবে।” সেডনা রেগে গিয়ে বললো, “প্রয়োজনে এক কুকুর বিয়ে করবো, তবুও কোনো শিকারি বিয়ে করবো না।” বাবা তাই করলো, জোর করে সে তার অবাধ্য মেয়েকে এক কুকুরের সাথে বিয়ে দিয়ে একটি আলাদা ছোট দ্বীপে নির্বাসন দিলো।
কুকুর-স্বামী প্রতিদিন খাবার নিয়ে সে দ্বীপে যেতো, সেডনাকে খেতে দিতো, আবার চলে আসতো। এভাবে অনেকদিন হয়ে গেলো। সেডনার কিছু সন্তান হলো কুকুর জাতীয়, কিছু সন্তান হলো মানুষ জাতীয়। এক সময় সেডনার মনে এই জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা শুরু হলো, বাবাও তার ভুল বুঝতে পারলো। কোনো একদিন বাবা সেডনার কুকুর-স্বামীকে হত্যা করে সেডনাকে গ্রামে নিয়ে আসে।
বেশ কিছুদিন পর, এক কায়াকে করে খুব অভিজাত পোশাকে (খুব বেশী ফার যুক্ত) এক যুবক সে গ্রামে এসে ভিড়লো। যুবকটি এসে সেডনার বাবার কাছে সেডনাকে বিয়ে করার অনুমতি চাইলো। সেডনারও খুব পছন্দ হলো। যুবকটিকে সলাজ কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, “আপনাদের দ্বীপে কী কোনো সুন্দরী অবিবাহিত মেয়ে নেই?” “আছে, কিন্তু আমি তোমাকে বিয়ে করার জন্যই এতটা পথ পাড়ি দিয়েছি। আমি তোমাকে খুব সুখে রাখবো, সব ধরনের খাবার তুমি পাবে, খুব সুন্দর একটা বাড়িও পাবে।” বিয়েটা হতে আর খুব বেশী সময় লাগে নি। যুবকটি বিয়ে শেষে সেডনাকে নিয়ে ওদের দ্বীপের দিকে যাত্রা শুরু করলো।
অনেক, অনেক দূরে সেডনা যখন যুবকদের দ্বীপে এলো, কাউকে দেখতে পেলো না। দেখতে পেলো না কোনো বাড়িও। দ্বীপের একপ্রান্তে এক বিশাল পাখির বাসা দেখিয়ে যুবকটি বললো, “ওই যে, আমার বাড়ি!” সেডনার বিস্মিত চোখের সামনে যুবকটি তার আসল পরিচয় দিলো। সে র্যা ভেন গোষ্ঠীভুক্ত এক বিশাল পাখি, সেডনাকে বিয়ে করার জন্য সমস্ত শক্তি দিয়ে কিছু সময়ের জন্য মানুষে রুপান্তরিত হয়েছিলো। সেডনা যেনো হতাশ হয়ে পড়লো। তার স্বপ্ন যেনো ভেঙ্গে চৌচির হয়ে গেলো। সে অবিরত কাঁদতে শুরু করলো।
সেডনার কান্নার শব্দ বাতাসে ভেসে সেডনার বাবার কাছে পৌঁছালো। মেয়ের কষ্টে সেও খুব কষ্ট পেলো। মেয়েকে খুঁজতে খুঁজতে পাখি-স্বামীর দ্বীপে এলো সেডনার বাবা। বাবা যখন দ্বীপে এলো, তখন পাখি-স্বামী আর্কটিকে মাছ শিকারে বের হয়েছিলো। এই সুযোগে বাবা, সেডনাকে নিয়ে কায়াকে (এক ধরনের নৌকা) করে সেডনাদের দ্বীপের দিকে রওয়ানা দিলো।
দূর থেকে পাখি-স্বামী কায়াকে করে সেডনার চলে যাওয়া দেখতে পেয়েই বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে ধাওয়া শুরু করলো। এইসব বিশালকায় পাখিগুলোর ডানার ঝাপটায় সাগরে প্রচণ্ড ঝড়ের সৃষ্টি হয়। এমন ঝড়ের সৃষ্টি হয় যে, কায়াকে বাবা আর সেডনার একসাথে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
পাখির ডানার ঝাপটায় সাগরে এক ঝড়ের সৃষ্টি হয়
সেডনার বাবা নিজেকে বাঁচানোর জন্য সেডনাকে সাগরে ছুড়ে ফেলে দেয়। কিন্তু সেডনা এতো সহজে এই পৃথিবী থেকে চলে যাবার জন্য প্রস্তুত ছিলো না। সেই হিম শীতল সাগরে সাতরে সে কায়াকের কিনারা ধরে ঝুলে রইলো। কায়াক ভারসাম্য হারিয়ে ফেললে, বাবা সেডনার একটা আঙ্গুল কেটে ফেলে। কাটা আঙ্গুলটি সাগরে পড়া মাত্রই সেখান থেকে একটি সীল মাছের সৃষ্টি হলো। বাবা আরেকটি আঙ্গুল কাটলো, সেখান থেকে তিমি, আরেকটি আঙ্গুল থেকে ওয়ালরুস, এবং আরেকটি আঙ্গুল থেকে মাছের সৃষ্টি হলো। এক সময় সেডনা সেই হিম শীতল সাগরের তলদেশে তলিয়ে গেলো। কিন্তু মারা গেলো না, পরিনত হলো সাগরে দেবীতে, যে দেবী তার শরীরের অঙ্গ থেকে সৃষ্ট সাগরের প্রাণীগুলোর অভিভাবক হিসেবে আজও বেঁচে আছে ইনুইটদের মননে।
আর্কটিক অঞ্চলের শিকারিরা তাদের শিকারের জন্য সেডনা দেবীর উপর খুবই নির্ভরশীল। যখন সাগরে কোনো শিকার পাওয়া যায় না, ইনুইটরা বুঝতে পারে কোনো কারণে সেডনার বিশাল কালো চুল এলোমেলো হয়ে গেছে। সেডনার যেহেতু কোনো আঙ্গুল নেই, সে চুল আঁচরাতে পারছে না, তাই সেডনা ক্ষেপে আছে এবং কোনো শিকার দিচ্ছে না। সেই সময় ইনুইট শামান (ধর্মীয় পুরুষ) সাগরের তলদেশে সেডনার কাছে যাত্রা শুরু করে, সেডনার চুল চিরুনি দিয়ে সুন্দর করে আঁচড়িয়ে দেয়। সেডনাও খুশি হয়ে শিকারিদের কাছে শিকারদের সহজলভ্য করে দেয়। এভাবেই সেডনা হয়ে গেলো ইনুইটদের প্রধান দেবী, যার উপরের অংশ মানুষের মতো এবং নিচের অংশ মাছের লেজের মতো।কোনো কোনো ইনুইট ভার্সনে আছে, সেডনার সাথে সাগরতলে তার কুকুর-স্বামীও রয়েছে।
Tags
গল্পের আসর