অনেক অনেক দিন আগের কথা। নরওয়ে দেশে এক রাজা ছিল। আর সেই রাজার ছিল এক-এক করে বারোটি ছেলে। রাজপুত্ররা দেখতে-দেখতে একদিন বড় হয়ে গেল। রাজা রাজপুত্রদের ডাকল। বলল, তোমরা এখন বড় হয়েছে। যাও, এখ তোমরা বউয়ের খোঁজে বেরিয়ে পড়। রাজার কথা শুনে রাজপুত্রেরা ভারি খুশি হল। তারা লাল টুকটুকে বউই নিয়ে আসবে। রাজা বলল, দেখ, যে কোনও মেয়েকে আবার বিয়ে করে বসো না যেন। যে মেয়ে সুতা কাটতে পারে, কাপড় বুনতে পারে, একদিনেই জামা সেলাই করতে পারে সেরকম মেয়েকেই বিয়ে কোরো কিন্তু। এই বলে রাজা রাজপুত্রদের ঘোড়া আর ঢাল-তলোয়ার দিলেন। রাজপুত্ররা ঢাল-তলোয়ার নিয়ে মনের আনন্দে ঘোড়া ছুটিয়ে দিল। কিছু দূর যাওয়ার পর রাজপুত্ররা ঘোড়া থামাল। রাজপুত্রদের মধ্যে সবচে ছোট যে রাজপুত্রের তার নাম ছিল বুটস। বুটসকে অন্য রাজপুত্ররা দারুণ হিংসে করত। তারা বুটস কে সঙ্গে নেবে না। বুটস কোনও কাজের না। তারা বুটস কে পথের মাঝখানে ফেলে রেখে আবার ঘোড়া ছুটিয়ে দিল। বুটস মনের দুঃখে ঘোড়া থেকে নামল। এখন কোথায় যাই, কি করি। এমন সব ভাবতে লাগল সে। বউ নিয়ে রাজপ্রাসাদে ফিরে না -গেলে রাজা আবার রাগ করবে। কিন্তু আমি এখন বউ পাই কোথায়? বুটস বসে বসে কাঁদতে লাগল। ওর চারপাশে ঘাসের বন। সোনালি রোদে ডুবে আছে। ঘাসের লম্বা ডগাগুলি দুলছিল বাতাসে । হঠাৎ বুটস দেখতে পেল যে ওর পায়ের কাছে ঘাসগুলি নড়ছে। ওখানে ছোট সাদা একটা কি যেন।ওমাঃ, ছোট্ট একটা মেয়ে যে! অনেক ছোট্ট। বুটস ঝুঁকে দেখল: ঘাস দিয়ে তৈরি একটা ছোট পুতুল। চমৎকার একটা চেয়ারে বসে আছে। আহা, কী সুন্দর দেখতে! ঘাসের পুতুল কে বুটস- এর ভারি পছন্দ হয়ে গেল। ঘাসের পুতুল রিনরিনে কন্ঠে বলল, তুমি কে গো? এখানে কি করছ শুনি? বুটস তখন ঘাসের পুতুলকে সব খুলে বলল। ওর দুষ্টু ভাইদের কথা বলল, রাজার কথাও বলল। ও যে বউয়ের খোঁজে বেরিয়েছে সে কথাও বলল। বলল, যে কোনও মেয়ে হলে চলবে না কিন্তু। যে মেয়ে সুতা কাটতে পারে, কাপড় বুনতে পারে আর একদিনেই জামা সেলাই করতে পারে- সেরকম মেয়েকেই বিয়ে করবে বুটস। ঘাসের পুতুল মন দিয়ে বুটসের কথা শুনল। তারও যে বুটসকে ভারি পছন্দ হয়েছে। তা ছাড়া ঘাসের পুতুল সুতা কাটতে পারে, কাপড় বুনতে পারে একদিনেই জামা সেলাই করতে পারে। তবে সে জামা ছোট। অনেক ছোট। বুটসকে সে কথা ঘাসের পুতুল বলল। বুটস বলল, তালে আমি তোমাকে বিয়ে করব। তুমি দেখতে খুব সুন্দর। ঘাসের পুতুল লজ্জ্বা পেলেও রাজি হল । বুটসও খুশি হল । আবার লজ্জ্বাও পেল। ঘাসের পুতুল এত ছোট! রাজা একে দেখে কি মনে করেন। বুটস বলল, তা'লে এখন তুমি আমার ঘোড়ার পিঠে চড়ে বস। ঘাসের পুতুল বলল, কেন? আমি তোমার ঘোড়ার পিঠে চড়ে বসব কেন? বুটস বলল, বারে। তুমি রাজপ্রাসাদে যাবে না? কেন- তুমিই না তখন আমায় বললে যে তুমি আমায় বিয়ে করতে চাও। না। আমি ঘোড়ায় চড়ব না। ঘাসের পুতুল ঘাড় বাঁকিয়ে বলল। অন্যদিকে তাকিয়ে থাকল। তালে? তালে তুমি কীভাবে রাজপ্রাসাদে যাবে? বলে অবাক হয়ে ঘাসের পুতুলের দিকে তাকিয়ে রইল বুটস। ঘাসের পুতুল বলল, আমি যাব রূপোর চামচে করে । আমার ছোট-ছোট দুটি সাদা ঘোড়া আছে। ঠিক আছে। তাই চল। বুটস বলল। বুটস ঘোড়ায় আর ঘাসের পুতুল দুটি ছোট ছোট ঘোড়ায় টানা রূপোর চামচে যেতে লাগল। অবশ্যি ঘাসের পুতুল যাকে সাদা ঘোড়া বলছে, সেগুলি আসলে ছোট ছোট দুটি ইঁদুর! যা হোক। বুটস রাস্তার ধার ঘেঁষে চলতে লাগল। কারণ, ঘাসের পুতুল এত ছোট । যদি তার ওপরে ধপাস করে পড়ে যায়! তারপর যেতে-যেতে যেতে-যেতে পড়ল একটা নদী। বুটসের ঘোড়া নদীর পাড়ে এসে নদীর পানি দেখে পেল ভয়। ঘোড়াটা পথ আটকে চিহি চিহি করতে লাগল। আর তাতে হল কী জান - ঘাসের পুতুল নদীর পানিতে পড়ে গেল ... আর হাবুডুবু খেতে লাগল । বুটস-এর কান্না পেল। সে কী করতে বুঝতে পারল না। সেই নদীতে ছিল একটা যাদুকর মৎস্যপুরুষ (Merman) সেই যাদুকর মৎস্যপুরুষই নদীর পানি থেকে ঘাসের পুতুলকে তুলে এনে দিল পাড়ে ... আর কী আশ্চর্য! ঘাসের পুতুল আর ছোটটি নেই। অনেক বড় হয়ে গেছে। প্রায় বুটসের সমান। আর কী সুন্দরই-না দেখাচ্ছে ওকে। যেন নরওয়ে দেশের লাল টুকটুকে রাজকন্য। বুটস খুশিতে আটখানা হয়ে রূপসী ঘাসের পুতুলকে ঘোড়ায় তুলে নিল। রাজপ্রাসাদের ফিরে বুটস দেখল ওর অন্য সব ভাইয়েরাও বউদের নিয়ে ফিরে এসেছে। কিন্তু ভাইয়ের বউগুলি দেখতে ভারি কুশ্রী। তারা একজন আরেকজনের সঙ্গে ঝগড়া করছে। তাদের মাথায় নোংরা টুপি। সেই টুপিতে ঝুল আর আলকাতরা লেগে আছে। বৃষ্টির পানিতে ওদের মুখগুলি নোংরা হয়ে আছে। ভারি কুশ্রী আর কুৎসিত দেখাচ্ছিল ওদের । ভাইয়েরা বুটস আর ঘাসের পুতুলকে দেখে ঈর্ষায় জ্বলে উঠল। রাজা কিন্তু বুটস আর ঘাসের পুতুলকে দেখে খুশিতে ডগমগ হয়ে উঠলেন। রাজা অন্য ছেলেদের আর তাদের বউদের রাজপ্রাসাদ থেকে বার করে দিলেন। তারপর বুটস-এর সঙ্গে ঘাসের পুতুলের বিয়ে দিলেন। বিয়ের দিনে নানা রকম উপহার নিয়ে ভোজসভায় রাজ্যের লোকজন এল। তারপর? তারপর বুটস আর ঘাসের পুতুলের দিনগুলি বড় সুখে কাটতে লাগল। অনেক অনেক সুখে। ... যদি আজও তারা বেঁচে থাকে তো আজও তারা সুখেই আছে ...a
Tags
গল্পের আসর