পাগলা সফি- ভূত ধরার মন্ত্রে সিদ্ধি লাভ করেছে কদিন হল! কাজেই ভূত-প্রেতের আর ভয় নেই তার। ফলে ঠিক করেছে ভূতের একটা হ্যাস্ত-ন্যাস্ত করে তবে ছাড়বে সে। যাতে কোন ভূত আর কোনদিনও কোন মানুষকে ভয় দেখাতে না পারে। ওদিকে ভূত সম্প্রদায়ের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ের বিয়ে আজ- অনুষ্ঠিত হবে রাত বারোটার পরে জঙ্গল বাড়ির ভূত পুরিতে। শোনা গেছে সবচেয়ে জাদরেল আর পাজি ভূতটা জোর করে বিয়ে করছে তাকে। মেয়েটা না কি একদমই রাজি নয় এ বিয়েতে। তাই ঐ নচ্ছার ভূতটার হাত থেকে বাঁচার জন্য ভূত কণ্যা গত রাতে এসেছিল সফির কাছে। যদি সে কিছু করতে পারে মেয়েটার জন্য। সফি কথা দিয়েছে- যেভাবেই হোক এ বিয়ে সে বন্ধ করবেই করবে। তবে তার শর্ত হল, এরপর থেকে আর কোন ভূত যেন মানুষের কোন ক্ষতি না করে, এ মর্মে অঙ্গিকার করতে হবে ভূতেদের। শফির শর্ত মেনেও নিয়েছে ভূত কণ্যা। তাছাড়া এও বলে গেছে- সে যদি সত্যি সত্যি ঐ জাদরেল ভূতটার একটা বিহিত করতে পারে, তাহলে শুধু সে একা নয়, সমস্ত ভূতেরা তার গোলাম হয়ে থাকবে! কেননা, ঐ বদমাশটা ভীষণ অত্যাচার করে ভূতেদের উপর। আর কেউ তার বিরুদ্ধে একটা টুঁ শব্দও করার সাহস পায়না! যেহেতু সে সমস্ত ভূতেদের মধ্যে প্রচন্ড শক্তিশালী এবং প্রখর বুদ্ধিদ্বীপ্ত!
জাদরেল ভূতটার ব্যাপারে এ সমস্ত কথা মনে করে কিছুক্ষণ প্রাণ খুলে হেসে নিল পাগলা সফি। এরপর বিড়বিড় করে ওঠল এই বলে যে, যত শক্তিশালী আর বুদ্ধিধর ভূতই হোকনা কেন- তার মন্ত্রের কাছে সবাই ব্যর্থ। কাজেই, যথা সময়েই ভূত পুরিতে উপস্থিত হওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিল সে।
এদিকে পাগলা সফির ভূত পুরিতে যাওয়ার বিরাট প্রস্তুতি দেখে নানা জনে নানা রকম মন্তব্য করতে লাগল। কেউ বলল, “মরার সময় হয়ে এলে এভাবেই ভূত মারার নেশা চাপে!” কেউ বলে ওঠল, “যত্তসব পাগলামি!” কেউ কেউ আবার খুব করে নিষেধ করল তাকে, যেন সে কিছুতেই ভূত পুরিতে না যায়! কেননা, আজ অমাবস্যা, তার ওপর আবার কৃষ্ণ তীথি চলছে! এ সময়টা ভূতেদের জন্য সত্যিই খুব সুবিধাজনক হয়। যখন তাদের শক্তি আগের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেড়ে যায়! তাছাড়া যারা ছোট থেকেই সফির আপনজন, তারাও নিষেধ করল সফিকে। যেন আজ রাতে সে ভূত পুরিতে না যায়। তাদের আশংকা হয়, হয়ত ফঁন্দি এঁটেই তাকে ভূত পুরিতে নেয়া হচ্ছে! যাতে ভূত সম্প্রদায়ের কাল হয়ে ওঠার আগেই তাকে শেষ করে দিতে পারে! কেননা ভূতেরাও এখন জেনে গেছে সফির ভূত বিদ্যায় পাঠ লাভের কথা! তাই তাকে মেরে ফেলতে পারলেই তারা বেঁচে যায়! কিন্তু সফির সে এক কথা। সে আজ ভূত পুরিতে যাবেই যাবে। কেননা সে ভূত কণ্যাকে কথা দিয়েছে। তাছাড়া সমাজের মানুষের প্রতিওতো তার কর্তব্য আছে। যদি সে আজ রাতে কৃতকার্য হয়ে ফিরতে পারে, তাহলে এরপর থেকে আর কখনো কারো ভূতের ভয় থাকবেনা। তাই সে যাবেই যাবে। এতে যদি তার মরণও হয়, তবুও সে পিছ পা হবেনা। কারণ সে জানে- “বাঁচার অধিকার কেবল তারই আছে, প্রয়োজনে যে মরিতে প্রস্তুত!” সুতরাং, কারো কথারই তেমন প্রভাব পড়লনা সফির ওপর।
রাত বারোটা বাজার ঘন্টাখানেক আগে সফি বেরিয়ে পড়ল ভূত পুরির উদ্দেশ্যে। মনে তার প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস আর মন্ত্রের জোর। তার বিশ্বাস- কোন ভূতই তার কোনরূপ ক্ষতি করতে সমর্থ হবেনা। কেননা তার মন্ত্রের প্রতিটা কথাই আল্লাহর কালাম, যা কাউকে ভয় পাওয়ার জন্য পৃথিবীতে আসেনি। যাই হোক, হাঁটতে হাঁটতে সফি যখন ভূত পুরির একেবারে কাছে চলে এল- এসময় নানা রকমের ভূতুরে কান্ড ঘটতে লাগল তার চোখের সামনে। সে দেখতে পেল, উঁচু উঁচু চারটি গাছের একেবারে মাথার ওপর লম্বা লম্বি করে কয়েকজন মানুষকে বিছিয়ে রাখা হয়েছে। যাদেরকে নিচ থেকে পোড়ানো হচ্ছে আগুনের তাপে। এরপর একটা একটা করে ধরে পোড়া মুরগির মত করে ছিড়ে ছিড়ে খেয়ে নিচ্ছে ভূতেরা! যা দেখে কারোরই ঠিক থাকার কথা নয়! এসময় খাওয়া শেষ করে একলাফে অতো উঁচু গাছ থেকে পা ঝুলিয়ে নিচে নেমে এল ভূতেরা! সফি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে নিয়ে আবার গাছের আগায় চলে গেল তারা। এরপর তাকে নিয়ে নানা রকম খেলা খেলতে লাগল আর বিশ্রীভাবে হাসতে লাগল তারা। যেন সফি তাদের খেলার পুতুল! সফিও কিছু বললনা তাদের আর ভয়ও পেলনা। বদনখানা তার বড় খোশ খোশই দেখাচ্ছিল। তা দেখেতো ভূতেদের চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে এল। কেউ কেউ বলতে লাগল, “রে ভাই, একি মানুষ- না আর কিছু! ভয় ডর বলতে কিচ্ছু নেই!” একজন ভূত তখন পাগলা সফির এক ঠ্যাং ধরে প্রচন্ড জোরে ঘুরাতে ঘুরাতে এমন জোরে ঢিল মারল যে, ওড়ে এসে একেবারে বিয়ের মন্ডপে পড়ল সে। এভাবে সফির আগমণ দেখে ভূত কণ্যা কিছুটা ভয় পেলেও আশ্বস্থ হল এই ভেবে যে, সফি এসে পড়েছে। এখন আর কোন ভয় নেই তার। ওদিকে উপস্থিত সব ভূতেরা চমকে গেল সফিকে দেখে! কেবল ঐ জাদরেল ভূতটা গর্জন করে ওঠল এই বলে যে, “কে রে নির্বোধ তুই? এখানে মরতে এসেছিস!” সফি জবাব দিল, “আজ্ঞে! আমি পাগলা সফি। ভূত ধরা পন্ডিত। এসেছি তোমাকে বন্দি করে নিয়ে যেতে। শুনেছি, তুমি না কি খুব শক্তিধর!তা- দেখাওতো তোমার শক্তি! নইলে আমি যে তোমার বারোটা বাজিয়ে ছাড়ব!” সফির কথা শুনে জাদরেল ভূতটা ভীষণ ক্ষেপে গেল। বলে ওঠল, “তবে রে! দেখ তবে আমার শক্তির খেল!” এই বলে যখনি সফির গলাটা চেপে ধরতে আসবে অমনি সফি বলে ওঠল, “আরে গুরু, তুমি যে ভীষণ শক্তিধর এ কথা কে না জানে! কিন্তু আমি যে তোমাকে বন্ধি করার গোপন মন্ত্র জানি, সে কথা কি তুমি জান?” চমকে ওঠল জাদরেল ভূত! “গোপন মন্ত্র!” একসাথে বলে ওঠল সমস্ত ভূতেরা। এসময় সফি বলতে লাগল, “ভূত সব! এ শয়তানটা একটা অত্যাচারি! যার হাত থেকে আপনারা সকলেই নিস্তার চান! এতদিন কেউ কিছু বলতে পারেননি ভয়ে। কেননা হারামিটার অনেক শক্তি। কিন্তু এখন আর আপনাদের ভয় নেই! আমি আছি আপনাদের পাশে। আপনারা সবাই একযোগে আক্রমণ করুন তাকে। দেখবেন- আপনাদের সম্মিলিত শক্তির কাছে ওর একার শক্তি কিছুইনা।” কথাটা বলা শেষ না হতেই, সমস্ত ভূতেরা একত্রে হামলা করে জাপটে ধরল জাদরেলটাকে। ফলে সবার শক্তির সাথে কুলোতে না পেরে মুহূর্তেই মারা পড়ল সে। আর ভূত সমাজে ফিরে এল শান্তি। কাজেই পূর্ব প্রতিশ্রুতি মতে অঙ্গিকার নামা দেয়া হল সফির হাতে। পরদিন সকালে যা এনে লোকেদের দেখাতেই ধন্য ধন্য রব পড়ে গেল সবার মাঝে। সেইসাথে সবাই বুঝতে পারল, সত্সাহস আর কর্মনিষ্ঠা থাকলে যেকোন কাজেই সাফল্য পাওয়া যায়।
জাদরেল ভূতটার ব্যাপারে এ সমস্ত কথা মনে করে কিছুক্ষণ প্রাণ খুলে হেসে নিল পাগলা সফি। এরপর বিড়বিড় করে ওঠল এই বলে যে, যত শক্তিশালী আর বুদ্ধিধর ভূতই হোকনা কেন- তার মন্ত্রের কাছে সবাই ব্যর্থ। কাজেই, যথা সময়েই ভূত পুরিতে উপস্থিত হওয়ার জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিল সে।
এদিকে পাগলা সফির ভূত পুরিতে যাওয়ার বিরাট প্রস্তুতি দেখে নানা জনে নানা রকম মন্তব্য করতে লাগল। কেউ বলল, “মরার সময় হয়ে এলে এভাবেই ভূত মারার নেশা চাপে!” কেউ বলে ওঠল, “যত্তসব পাগলামি!” কেউ কেউ আবার খুব করে নিষেধ করল তাকে, যেন সে কিছুতেই ভূত পুরিতে না যায়! কেননা, আজ অমাবস্যা, তার ওপর আবার কৃষ্ণ তীথি চলছে! এ সময়টা ভূতেদের জন্য সত্যিই খুব সুবিধাজনক হয়। যখন তাদের শক্তি আগের চেয়ে প্রায় তিনগুণ বেড়ে যায়! তাছাড়া যারা ছোট থেকেই সফির আপনজন, তারাও নিষেধ করল সফিকে। যেন আজ রাতে সে ভূত পুরিতে না যায়। তাদের আশংকা হয়, হয়ত ফঁন্দি এঁটেই তাকে ভূত পুরিতে নেয়া হচ্ছে! যাতে ভূত সম্প্রদায়ের কাল হয়ে ওঠার আগেই তাকে শেষ করে দিতে পারে! কেননা ভূতেরাও এখন জেনে গেছে সফির ভূত বিদ্যায় পাঠ লাভের কথা! তাই তাকে মেরে ফেলতে পারলেই তারা বেঁচে যায়! কিন্তু সফির সে এক কথা। সে আজ ভূত পুরিতে যাবেই যাবে। কেননা সে ভূত কণ্যাকে কথা দিয়েছে। তাছাড়া সমাজের মানুষের প্রতিওতো তার কর্তব্য আছে। যদি সে আজ রাতে কৃতকার্য হয়ে ফিরতে পারে, তাহলে এরপর থেকে আর কখনো কারো ভূতের ভয় থাকবেনা। তাই সে যাবেই যাবে। এতে যদি তার মরণও হয়, তবুও সে পিছ পা হবেনা। কারণ সে জানে- “বাঁচার অধিকার কেবল তারই আছে, প্রয়োজনে যে মরিতে প্রস্তুত!” সুতরাং, কারো কথারই তেমন প্রভাব পড়লনা সফির ওপর।
রাত বারোটা বাজার ঘন্টাখানেক আগে সফি বেরিয়ে পড়ল ভূত পুরির উদ্দেশ্যে। মনে তার প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস আর মন্ত্রের জোর। তার বিশ্বাস- কোন ভূতই তার কোনরূপ ক্ষতি করতে সমর্থ হবেনা। কেননা তার মন্ত্রের প্রতিটা কথাই আল্লাহর কালাম, যা কাউকে ভয় পাওয়ার জন্য পৃথিবীতে আসেনি। যাই হোক, হাঁটতে হাঁটতে সফি যখন ভূত পুরির একেবারে কাছে চলে এল- এসময় নানা রকমের ভূতুরে কান্ড ঘটতে লাগল তার চোখের সামনে। সে দেখতে পেল, উঁচু উঁচু চারটি গাছের একেবারে মাথার ওপর লম্বা লম্বি করে কয়েকজন মানুষকে বিছিয়ে রাখা হয়েছে। যাদেরকে নিচ থেকে পোড়ানো হচ্ছে আগুনের তাপে। এরপর একটা একটা করে ধরে পোড়া মুরগির মত করে ছিড়ে ছিড়ে খেয়ে নিচ্ছে ভূতেরা! যা দেখে কারোরই ঠিক থাকার কথা নয়! এসময় খাওয়া শেষ করে একলাফে অতো উঁচু গাছ থেকে পা ঝুলিয়ে নিচে নেমে এল ভূতেরা! সফি কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে নিয়ে আবার গাছের আগায় চলে গেল তারা। এরপর তাকে নিয়ে নানা রকম খেলা খেলতে লাগল আর বিশ্রীভাবে হাসতে লাগল তারা। যেন সফি তাদের খেলার পুতুল! সফিও কিছু বললনা তাদের আর ভয়ও পেলনা। বদনখানা তার বড় খোশ খোশই দেখাচ্ছিল। তা দেখেতো ভূতেদের চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে এল। কেউ কেউ বলতে লাগল, “রে ভাই, একি মানুষ- না আর কিছু! ভয় ডর বলতে কিচ্ছু নেই!” একজন ভূত তখন পাগলা সফির এক ঠ্যাং ধরে প্রচন্ড জোরে ঘুরাতে ঘুরাতে এমন জোরে ঢিল মারল যে, ওড়ে এসে একেবারে বিয়ের মন্ডপে পড়ল সে। এভাবে সফির আগমণ দেখে ভূত কণ্যা কিছুটা ভয় পেলেও আশ্বস্থ হল এই ভেবে যে, সফি এসে পড়েছে। এখন আর কোন ভয় নেই তার। ওদিকে উপস্থিত সব ভূতেরা চমকে গেল সফিকে দেখে! কেবল ঐ জাদরেল ভূতটা গর্জন করে ওঠল এই বলে যে, “কে রে নির্বোধ তুই? এখানে মরতে এসেছিস!” সফি জবাব দিল, “আজ্ঞে! আমি পাগলা সফি। ভূত ধরা পন্ডিত। এসেছি তোমাকে বন্দি করে নিয়ে যেতে। শুনেছি, তুমি না কি খুব শক্তিধর!তা- দেখাওতো তোমার শক্তি! নইলে আমি যে তোমার বারোটা বাজিয়ে ছাড়ব!” সফির কথা শুনে জাদরেল ভূতটা ভীষণ ক্ষেপে গেল। বলে ওঠল, “তবে রে! দেখ তবে আমার শক্তির খেল!” এই বলে যখনি সফির গলাটা চেপে ধরতে আসবে অমনি সফি বলে ওঠল, “আরে গুরু, তুমি যে ভীষণ শক্তিধর এ কথা কে না জানে! কিন্তু আমি যে তোমাকে বন্ধি করার গোপন মন্ত্র জানি, সে কথা কি তুমি জান?” চমকে ওঠল জাদরেল ভূত! “গোপন মন্ত্র!” একসাথে বলে ওঠল সমস্ত ভূতেরা। এসময় সফি বলতে লাগল, “ভূত সব! এ শয়তানটা একটা অত্যাচারি! যার হাত থেকে আপনারা সকলেই নিস্তার চান! এতদিন কেউ কিছু বলতে পারেননি ভয়ে। কেননা হারামিটার অনেক শক্তি। কিন্তু এখন আর আপনাদের ভয় নেই! আমি আছি আপনাদের পাশে। আপনারা সবাই একযোগে আক্রমণ করুন তাকে। দেখবেন- আপনাদের সম্মিলিত শক্তির কাছে ওর একার শক্তি কিছুইনা।” কথাটা বলা শেষ না হতেই, সমস্ত ভূতেরা একত্রে হামলা করে জাপটে ধরল জাদরেলটাকে। ফলে সবার শক্তির সাথে কুলোতে না পেরে মুহূর্তেই মারা পড়ল সে। আর ভূত সমাজে ফিরে এল শান্তি। কাজেই পূর্ব প্রতিশ্রুতি মতে অঙ্গিকার নামা দেয়া হল সফির হাতে। পরদিন সকালে যা এনে লোকেদের দেখাতেই ধন্য ধন্য রব পড়ে গেল সবার মাঝে। সেইসাথে সবাই বুঝতে পারল, সত্সাহস আর কর্মনিষ্ঠা থাকলে যেকোন কাজেই সাফল্য পাওয়া যায়।
Tags
গল্পের আসর