গল্পটা সত্যিই অদ্ভুত। শীতের এক সকালে শ্রাবন দাদুর কাছ থেকে গল্পটা শুনেছিল। দাদু সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে বেড়াতে এসেছে। দুধ পীঠার গাছ নিয়ে এক মজার গল্প। শ্রাবনের সাথে তার বোন শ্রাবন্তীও যোগ দিল। গল্পটা এ রকম-"গ্রামের এক রাখাল পিঠা খাচ্ছিল।-------
হঠাৎ সে কি মনে করে একটা পিঠা মাটিতে লাগিয়ে দিল। প্রতিদিন সে এক গ্লাস দুধ ঢেলে দেয় সেখানে। সাতদিন পরে রাখাল দেখল, হঠাত করে সেখানে একটা পিঠার গাছ হয়েছে। আস্তে আস্তে পিঠার গাছ বড় হয়। রাখাল পিঠার গাছে উঠে পিঠা খায়। আর পাড়ার বন্ধুদের বিলিয়ে দেয়। রাখালের আনন্দ আর ধরে না। পিঠা খেয়ে খেয়ে রাখালের সময় ভালই চলছিল। হঠাত একদিন এক দাইনী বুড়ি এল। সে রাখালের কাছে একটা পিঠার আবদার করল। কিন্তু রাখাল তাকে কোন পিঠা দিলনা। সেই রাগে ডাইনী বুড়ি মন্ত্র পড়ে রাখালকে ভেড়া বানিয়ে ফেলল। গল্পটা শুনতে বেশ মজাই পেল শ্রাবন আর শ্রাবন্তী। তবে গল্পটা শ্রাবনের কাছে আজগুবী মনে হল। কিন্তু ছোট বোন শ্রাবন্তীর গল্পটা মনে ধরেছে।
একদিন শ্রাবন্তী বাড়ির পেছনে টবে পিঠে লাগিয়ে দিল। রোজ সকাল বিকেল শ্রাবন্তী গাছের টবে কিছু দুধ আর পানি দেয়। দুদিন পর চারা গজাল। শ্রাবন্তী ভাবল গল্পের সেই দুধ- পিঠের গাছ। গাছ দেখে সে কী খুশি!
শ্রাবন পিঠে লাগালে গাছ হয় এ গল্পটা বিশ্বাস করে নাই। কিন্তু তার চোখের সামনেই হন হন করে একটা গাছ বড় হচ্ছে। কী মারাত্মক! সে ভেবেই পাচ্ছিল না, এটা কই করে সম্ভব। গাছ বড় হতে দেখে শ্রাবন্তী দারুন খুশী। সে দাঁত উল্টিয়ে শ্রাবন ভাইয়াকে বলল, ‘পিঠা যখন ধরবে তখন দেখবি, আমি আর দাদু খাব। তোকে দেব না।’
শ্রাবন খিল খিল করে হাসে। বলে, "তারপর একদিন ডায়নি বুড়ি আসবে। তোকেও ভেড়া বালিয়ে ভেলবে"
শ্রাবন ভাইয়ার কথা কেড়ে নিয়ে শ্রাবন্তী বলে "গল্পের রাখালটা বোকা ছিল। ডায়নি বুড়িকে পিঠা খেতে দেয়নি।। তাই ডাইনি বুড়ি ওকে ভেড়া বানিয়ে দেয়। কিন্তু আমি ডাইনি বুড়িকে পিঠা খেতে দেব।’
শ্রাবন চুপ করে শোনে। তার বিশ্বাসে ফাটল ধরে। পিঠা লাগালে গাছ হয়। এটা তার মনে একটু একটু গেথে যায়।
শ্রাবন্তী আরো বলল, ‘ডাইনি বুড়িকে আমি বাসায় নিয়ে যাব। ওকে গেমস খেলতে দেব। ও খুশি হবে। তারপর আমরা ভাব জমিয়ে রাক্ষসপুরীতে যাব।
অনেক হীরে-জহরত আনব। আর আনব ডানাকাটা একটা লালপরী আর একটা নীল পরী।’সাথে ‘একটা জাদুর বাক্সও আনব। তখন আমি সবাইকে মজার মজার যাদু দেখাব ।
শ্রাবনের মন খারাপ হয়ে যায়। ভাবে সেও কেন শ্রাবন্তীর সঙ্গে থাকল না। পিঠার গাছ নিয়ে একটা স্বপ্নের মধ্যে শ্রাবন্তীর সময় পার হতে লাগল। পিঠের গাছটা বেশ বড় হয়েছে। প্রায় তিনফুট। কেমন প্যাচাঁনো গাছটা। দূর থেকে দেখলে সাপ মনে হয়।
সময় বয়ে যায় শ্রাবন্তীর দুধ-পিঠের গাছে আর পিঠে হয়না। শ্রাবন্তীর মনটা খারাপ হয়ে যায়। প্রায়ই বারান্দায় বসে গাছটার দিকে তাকিয়ে থাকে। শ্রাবন্তীর মনের এই অবস্থা দেখে বাসার সবাই চিন্তিত হয়ে পড়ে। বৃদ্ধ দাদুর মনে মনে অনুশোচনা হয়।
এক বিকেলে শ্রাবন্তীর পাশে গিয়ে বসে আদর করে বলে শ্রাবন্তীকে বলে এটা নিছক একটা গল্প। রুপকথার গল্প। রুপকথার গল্প কখনও বাস্তবে হয় না। পিঠে কখনও গাছে ধরে না। এটা রান্না ঘরে তৈরী করতে হয়। দাদুর কথা শুনে শ্রাবন্তী গুমড়ে কেদে উঠে।
দাদু আরো বলে পিঠে বানাতে চালের গুড়া, গুড়, তেল আরো অনেক কিছু লাগে। আমি তোমার আব্বুকে বলেছি আজ এ সব নিয়ে আসবে। বউমাকে বলেছি কাল তোমাকে পিঠা বিনিয়ে দেবে।
পরের দিন শ্রাবন্তীদের বাসায় পিঠা বানানোর ধুম পড়ে গেলে। শ্রাবন্তীও মায়ের সাথে পিঠা বানানোর কাজে মাকে সাহায্য করছে। বিকেলে শ্রাবন্তী তার বন্ধুদের দাওয়াত করেছে। এ যেন এক মহা উৎসব। বিকেলে বন্ধুদের সাথে পিঠা খেতে খেতে আনন্দে মেতে উঠল।
Tags
গল্পের আসর